Close

ড্রাকুলার হাউজ (পর্ব -৪) -ফাইজা বিনতে নূর

 

******ড্রাকুলার হাউজ ******

(পর্ব -৪)

সাথী কি করবে মনে মনে ভাবতে লাগলো। না না, কিছুতেই ঐ লোকটিকে অনুসরন করা যাবে না। কারন সাথী চায় না তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন হোক।ও ক্রমাগত ভাবতে লাগলো এখন কি করবে। এদিকে অনবরত পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। অনেক ভেবে চিন্তে সাথী বাদলকে ফোন দিলো। কিন্তু বাদল কিছুতেই ফোন তুলছে না। ও এবার মহা বিপদে পড়ে গেলো।কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই একের পর এক বাদলকে কল করেই যাচ্ছে।

বাদল ফোন তুলতেই সাথী ওকে বললো-” কি হলো? পাঁচবার কল দিলাম, ধরলে না যে!”

বাদল ঘুমোঘুমো কন্ঠে উত্তর দিলো -” আমি তো ঘুমচ্ছিলাম, তাই টের পাই নি।”

সাথী এবার লজ্জিত হয়ে বললো-” সরি, আসলে আমার বোঝা উচিত ছিলো এখন গভীর রাত।”

বাদল জবাব দিলো- “সমস্যা নেই, ইট’স ওকে। কি জন্য কল দিয়েছিস? দরকারি কিছু?”

সাথী ফিসফিসিয়ে বললো-” কে যেনো বাইরে হাঁটাহাঁটি করছে। আমার কাছে কেমন যেন সন্দেহ জনক লাগছে ব্যাপারটা।নিশ্চয়ই কেউ আমাদের ক্ষতি করতে চায়।”

বাদল আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো -” এতো রাতে কে হাঁটতে পারে! আর তোর কেন এই রকম মনে হচ্ছে?কে করবে আমাদের ক্ষতি!”

সাথী উত্তর দিলো -” জানি না, তবে আমার তাই মনে হচ্ছে।”

বাদল সাথীকে অভয় দিয়ে বললো-” চিন্তা করিস না। আমি বের হয়ে দেখছি কে বাইরে। তুই ঘুমিয়ে পড়।”

-” না না, আমিও বের হচ্ছি। তুমিও বের হও।”

তারপর আবছা ফোন লাইটের আলোতে ওরা দুজন রুম থেকে বেরিয়ে চারদিকটা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পায়ের আওয়াজ এখন আর শোনা যাচ্ছে না। ওরা চারপাশটা ভালোভাবে খুঁজলো কিন্তু কিছুই পেলো না। তবে কিছুক্ষণ পরেই কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলো।সাথী এবার ভয়ে শঙ্কায় আঁতকে উঠলো কিন্তু বাদল ওকে চুপ থাকতে বললো। ওরা দুজনে ভাঙ্গা শব্দকে অনুসরন করে ঐদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। সেখানে গিয়ে দেখলো একটি ফুলদানি ভেঙ্গে পড়ে আছে। সাথে সাথেই টের পেলো কেউ একজন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবছা আলোতে স্পষ্ট তার ছায়া দেখা যাচ্ছে।

বাদল আর সাথী নিঃশব্দে গিয়ে লোকটিকে খপ করে ধরে ফেললো।বাদল লোকটির মুখের মধ্যে লাইটের আলো ফেললো।কিন্তু একি! এতো দেখছি ওদের বাড়ির মালিক আলফ্রেড! লোকটি ঘুমের ঘোরে রাত্রিবেলা হাঁটছিলো। এখনো ঘুম ভাঙ্গে নি তাঁর। ওনার দুজন চাকর আছে, বাদল তাদেরকে ডাকলো ওনাকে উপরে নিয়ে যেতে। ওরা দুজন সহ ধরে ওনাকে সিঁড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসে তারপর ঘুমানোর জন্য যে যার রুমে চলে যায়।সাথী ওর রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।আর মনে মনে নিজের কান্ড নিয়ে হাসতে থাকে আর বলতে থাকে-” কি বোকামিই টা না করলাম। সামান্য একটা স্বপ্নের কথা বিশ্বাস করে সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম।”

সকাল হয়ে গেছে। চারদিকে সূর্যের আলোর আভা ফুটেছে। জনালার ফাঁক দিয়ে আলোর চিকন সুতো তীর্যকভাবে ঘরে প্রবেশ করেছে। সাথীর বাবা ওর ঘরে ঢুকে জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে বিছানায় ওর মাথার পাশে গিয়ে বসলেন। আলতো করে সাথীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন -” কিরে মা, সকাল হয়ে গেলো তো। উঠবি না?”

সাথী চোখ মেলে ওর বাবাকে দেখে উঠে বসলো। ঘুমো ঘুমো চোখে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো -“বাবা তুমি কখন ঘুম থেকে উঠলে?”

-“এইতো, কিছুক্ষণ আগে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। টেবিলে নাস্তা রাখা আছে।বাদল,সুজয়কে নিয়ে খেতে আয়।”

সাথী অবাক হয়ে বললো-“কে রান্না করেছে?”

সাথীর বাবা মি.সোহেল হেসে উত্তর দিলেন -” কে আবার! কাজের লেক রান্না করেছে। বাড়িওয়ালার কাজের লোককে বলেছি আমাদেরও কাজ করে দিতে।মাস শেষে টাকা দিয়ে দিবো।শুধুশুধু তোকে ঝামেলা করতে হবে না।”

বলে তিনি চলে গেলেন। সাথী ফ্রেশ হয়ে বাদল আর সুজয়কে নিয়ে নাস্তা করতে বসলো।তিনজনে খাওয়ার টেবিলে বসে গল্প করতে করতে হঠাৎ সাথী বললো-“বাব্বাহ্! কালকে রাতে আমার উপর দিয়ে যেই ধকলটাই না গেলো!”

সুজয় অবাক হয়ে বললো-” কেনো রে,কি হয়েছিলো? ভূত তাড়িয়েছিলি নাকি?”বলেই সুজয় হাহা করে হাসতে লাগলো।

সাথী ওকে রেগে গিয়ে বললো-“এই তুই থামতো। ভূত হলে তো মন্দ ছিলো না,সেটা তো অশরীরী। কালকে রাতে বাড়িওয়ালা আঙ্কেল ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে নিচে নেমে গিয়েছিলেন। তারপর হাঁটতে গিয়ে ফুলদানি ভাঙ্গলেন। আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি! কালকে সারা রাত আমার ঘুম হয় নি।”

সুজয় তাচ্ছিল্য করে জবাব দিলো -” তো কি হয়েছে? একটা রাত একটু কম ঘুমিয়েছিস। এতে তো কেনো সমস্যা দেখিছি না।”

সাথী রেগেমেগে উওর দিলো-” আমি বলতে চাচ্ছি আমার দুশ্চিন্তার কারনে ঘুম হয়নি।”

-“সংসারের দুশ্চিন্তা নাকি!” বলেই সুজয় হাসতে লাগলো।

বাদল ওদের দুজন কে থামালো, বললো-“দেখ,এসব সামান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে কেনো কথা বাড়াচ্ছিস?আর সজয়, তুই কি বাচ্চা নাকি যে ওর সাথে এমন করছিস? হতে পারে ও ব্যাপারটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছে। এতে হাসির কি হলো?”

এমন সময় বাড়িওয়ালা নিচে নেমে ওদের কাছে এলেন।ওনার উপস্থিতিতে ওরা তিনজন চুপ হয়ে গেলো। তিনি সাথীর দিকে তাকিয়ে বললেন-” আসলে রাতে তোমাদের ডিস্টার্ব করার জন্য আমি দুঃখিত। আসলে রাতে কখন যে ঘুমের ঘোরে হাঁটতে শুরু করি তা আমি নিজেও টের পাই না।আসলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

সাথী লজ্জিত হয়ে বললো- “না না আঙ্কেল। ব্যাপারটা আসলে সেরকম না।”

সাথীর বাবা এসে জবাব দিলেন -“আপনি তো আর এটা ইচ্ছে করে করেন নি।আর রাতে যদি আপনি ঘুমের ঘোরে কোথাও পড়ে যেতেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনার শরীরের কোনো না কোনো অংশে ব্যাথা পেতেন। তাই এই অবস্থায় আপনার যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়া তো ওদের কর্তব্য ছিলো।”

কৃতজ্ঞতায় বাড়িওয়ালা ওদেরকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা ভার্সিটির দিকে চলে গেলো। ক্লাস শেষ করে কাশফিয়াসহ ক্যাম্পাসে গিয়ে গল্প করলো। সুজয় কাশফিয়াকে কাল রাতের ঘটনাটি বললো।কাশফিয়া তো শুনে অবাক! বাদল ওদেরকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললো।

-” আসলে ঘুমের ঘোরে হাঁটাও একটা রোগ। যাকে বলে স্লিপ এপনিয়া। অনেক সময় রাতে ঘুমানোর পর স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ না করায় মানুষের মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে যায় কিন্তু শরীর জেগে থাকে। আর শরীরকে তখন মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই মানুষ ঘুমের ঘোরে হাটতে শুরু করে।”

বাদলের কথা শুনে ওরা বিষয়টি বুঝতে পারে। কিছুক্ষন ক্যাম্পাসে বসে ওরা বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে সাথী ওর বাবাকে ডাকাডাকি করে কিন্তু ওর বাবার কোনো সাড়া পেলো না। বাবার রুমে গিয়েও ওনাকে দেখতে পেলো না, তাই সাথী নিজের রুমে চলে যায়। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে বাদল আর সুজয় সহ পড়ার বিষয়ে আলাপ করতে বসলো। বাদল সাথীকে জিজ্ঞেস করলো –
“কিরে আঙ্কেলকে যে দেখছি না, কোথায় গেছেন উনি?”

কাশফিয়া দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে জবাব দিলো-” জানি না, রুমে গিয়েও বাবাকে দেখলাম না।”

এমন সময় সাথীর বাবা এসে বললেন-“এই তো আমি। উপরের তলায় গিয়েছিলাম মি.আলফ্রেড এর সাথে গল্প করতে। আসলে তোমরা তো বাইরে ছিলে তাই ভাবলাম একবার গিয়ে উপরের তলাটা দেখে আসি।”

সাথী ওর বাবাকে বললো-” তা কেমন দেখলে?”

-“দেখলাম তো ভালোই।কিন্তু উপরের তলার প্যাটার্ন আর বাড়ির নিচ তলার প্যাটার্ন ঠিক এক রকম নয়।কেমন যেনো অদ্ভুত টাইপের।”

বাদল আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো – মানে!

-“হ্যাঁ, উপরের তলায় গলিগুলোর দুইপাশে যে রুম আছে তা বোঝা বড় মুসকিল। পুরো দেয়ালই কেমন যানি অদ্ভুত, আয়নায় মোড়ানো! অনেক কষ্ট করে খুঁজে দরজা বের করতে হয়। আর চারপাশের গলি গুলো দিয়ে আমি অনেকবার হেঁটেছি, কিন্তু মনে হলো গোলকধাঁধার মতোই আমি এক যায়গাতে বারবার ঘুরছি।”

সুজয় জবাব দিলো-“তাই নাকি আঙ্কেল! সেটা আবার কি রকম?”

সাথীর বাবা বিষ্ময়ের ভাবে বললেন-” আমি অনেকবার এগলি ওগলি দিয়ে হেঁটেছি কিন্তু খেয়াল করলাম ঘুরেফিরে আলফ্রেডের দরজার কাছেই এসে থামছি। মনে হলো দরজার সামনে থেকে যেনো আমি এক পাও এগুই নি!”

বাদল মনে মনে ভাবলো -“এর মানে কি?আচ্ছা, এর মধ্যে আবার কোনো রহস্য লুকিয়ে নেই তো!”

চলবে……..

লেখাঃফাইজা বিনতে নূর।

svg1160