

বিয়ের পর পরই বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম,বউ রাজি ছিলো না,অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি সহ হাজারটা কারন দেখালো,তাই আমি মেনে নিয়েছি।থাক বাচ্চা লাগবে না বউ সুস্থ থাকলেই চলবে।
সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বউকে দুএকবার ডাকলাম।বউ আমার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,এদিকে সকাল সাতটায় আমার অফিস,নাস্তা না বানালে খাবো কি!!!আশেপাশে দোকান ও তো নেই,আমি না হয় অফিস ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো,বউয়ের ঘুম ভাঙলে কি খাবে??এভেবে এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে বউয়ের জন্য নাস্তা আনলাম,তারপর বউকে রেখে অফিসে গেলাম,থাক নাস্তা খাওয়া লাগবে না বউ আমার একটু শান্তিমত ঘুমাতে পারলেই চলবে।
অফিস থেকে একমাসের ছুটি নিয়ে বিয়ে করেছি,দীর্ঘদিন পর অফিসে আসা,কেমন লজ্জা লাগছে,সহকর্মীরা
সারাদিন গাঁদার খাটুনি শেষে এবার বাড়ি যাওয়ার পালা,অফিস শেষে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম,নতুন বউয়ের হাতের রান্না বেশ আগ্রহ নিয়ে খেতে বসেছি,খাবার মুখে নিয়ে বুঝলাম,বউয়ের রান্নার হাত জঘন্য,এদিকে বউটাও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,তাই হাসিমুখে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলাম।থাক ভালো রান্না লাগবে না বউ একটু ভালোবাসলেই চলবে।
বিকেল বেলা বাহিরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে,রোমান্টিক
থাক বৃষ্টিতে ভিজে লাভ নেই বউ সুস্থ থাকলে চলবে।
রাতের বেলা টিভি দেখতে বসলাম,বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা চলতেছে,বাংলাদেশ
বউয়ের জন্য বসে রইলাম,বউ আমার মনোযোগ দিয়ে নাটক দেখছে,এদিকে মশার কামড়ে পা ফুলে যাচ্ছে,রাত যখন এগারোটা “বউ চল ঘুমাবো ” বউ বললো প্লিজ আরেকটু ওয়েট কর,ওয়েট করতে করতে কখন যে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম টের ই পেলাম না।রাত তখন ১টা বাজে, বউ ডাকছে,এই ওঠে,ওঠো,অনেক বার ডাকাডাকির পর উঠলাম,ভাবলাম আমার লক্ষী বউ অফিসে যাওয়ার জন্য ডাকছে,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে গেলাম,রাত ১ টা,বউ বললো চল ঘুমাবো,মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তারপরও বউকে কিছু বলিনি,হাসিমুখে বললাম,চল ঘুমাবো,আর রাত জেগে নাটক পাটক দেখবা না,হুম মনে থাকবে।থাক বউয়ের বয়সই বা কতো এ বয়সে কত রাত জেগে নাটক সিনেমা দেখেছি।
ঘুম থেকে উঠলাম,বাহ বউটাও আমার সাথে উঠেছে,আমার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে,মনটা বেশ ভালো লাগছে,রুটি আর আলু ভাজি করে আমার সামনে এনে দিলো,,রুটিগুলো আধ পোড়া,আলুর ভাজির মধ্যে লবণ বেশি, তারপরও হাসিমুখে খেয়ে নিলাম,কার সাথে রাগ দেখাবো,কিছু বললে মনের মধ্যে যে আঘাত পাবে,তা অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী।
অফিস থেকে এসে দেখি বউ আমার সমস্ত কাপড়চোপড় পরিষ্কার করেছে,অবশ্য কাপড় আয়রন করতে দিয়ে পছন্দের দুইটা শার্ট পুড়িয়ে ফেলছে,একটু ও খারাপ লাগেনি,বউকে জড়িয়ে ধরে বললাম, তোমাকে এত কষ্ট করতে কে বলেছে???
অফিসের সবাই,এমনকি আমার বস ও নতুন ভাবিকে দেখবে বলে আমাকে পেরেসান করে ফেলছে,তাই বউকে বা জানিয়ে সবাইকে বাসায় নিয়ে গেলাম,বউতো পুরাই ক্ষেপে গেলো পর পুরুষের সামনে যেতে পারবে না,আর সবাই আমার সুন্দরী বউয়ের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকায়ি থাকুক তা চাইনি,সবাইকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে কোনরকম বুজিয়ে সুজিয়ে বিদায় দিলাম।
বিকেল বেলা বউ অঝোরে কাঁদছে,ভয় পেয়ে গেলাম,
আমার কোন ভুল হলো,
-না
কেউ কিছু বলেছে তাও না
বাড়ির কথা মনে পড়ছে,অনেক দিন আব্বু আম্মুকে দেখিনা।বউয়ের চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম,সামনের মাসে ছুটি নিয়ে প্রথমে বাড়িতে যাবো তারপর কিছুদিন পর তোমাদের বাড়িতে যাবো।
বউ আমার একদম নরম মনের মানুষ,কারনে অকারণে কান্না শুরু করে দেয়।
হঠাৎ বউ আমার বায়না ধরেছে,পাশের বাসায় ভাবিকে তার স্বামী সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দিছে,বউকে নিয়ে বের হলাম শাড়ি কিনতে,বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে ঢুকলাম,শত শত শাড়ি দেখলো,একটাও পছন্দ হচ্ছে না,মেজাজটা আমার চেয়ে দোকানিদের খারাপ হলো,অবশেষে বউয়ের শাড়ি পছন্দ হইছে,দামটা আর বললাম না,হেটে হেটে বাসায় এলাম।
থাক!!!আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ,টাকা না হয় একটু বেশিই গেল তাতে কি!!এ বলে মনকে শান্তনা দিলাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম,ঘুম ভাঙলো,বউ আমার বুকের ঠিক বা পাশে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,বউয়ের ঘুম ভেঙে যাবে তাই আমি ও শুয়ে থাকলাম।
#কে_আছে_তাদের_স্
একটা মেয়ে বিয়ের পর বাবা মায়ের ভালোবাসা ছেড়ে আপনার কাছে এসেছে,শুধুমাত্র
স্ত্রী ভুল করবে,এটাই স্বাভাবিক,সে তো ফেরেশতা নয়,
কখনো তরকারিতে লবন বেশি দিবে কখনো বা ভাত আটা বানিয়ে ফেলবে,
আপনি তো তার স্বামী,মাফ করে দিন।
যেসব স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে সবসময় ছাড় দিয়ে আসে তারাই সুখী।
অনেক স্বামী আছে যারা স্ত্রীর সামান্য অপরাধ মেনে নিতে পারে না,তারা দাম্পত্য জীবনে তেমন একটা সুখী নয়।
সব বাতাস গায়ে মাখতে হয় না কিছু বাতাস ছেড়ে দিতে হয়।
গল্প ঃ- Sacrifice.
লেখকঃ-Arman Hossain(আরমান হুসাইন)
সুত্রঃ ফেসবুক