Close

ড্রাকুলার হাউজ- ফাইজা বিনতে নূর৷

******ড্রাকুলার হাউজ******

(পর্ব -১)

বাদল,সুজয় আর সাথী ক্লাস শেষে ভার্সিটির এক কোনে মন খারাপ করে বসে আছে।বাদল বসে বসে এক মনে কি যেনো চিন্তা করছে। পরপর তিনদিন ভার্সিটির ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস গুলোতে দেরি করে আসার জন্য ওরা তিনজন ম্যামের কাছে বকা খেয়েছে। আসলে ওদের তিনজনের বাসা একটু দুরে, আর তিনজন একই সাথে আসে, তাই আসতে একটু দেরি হয়ে যায়। ওরা অনেকবার হোস্টেলে থাকার কথা বলেছিলো কিন্তু কারো পরিবারই এতে রাজি হয় নি। হোস্টেলে থাকা খাওয়ার কষ্ট, তাই ওনারা এতে রাজি না।

বাদলের মা বাদলকে এভাবে হোস্টেলে থাকতে দিতে একদমই রাজি নন। সুজয়ের বাবা তো সাফ সাফ মানা করে দিয়েছেন। বাবার কথার উপর একটা বাড়তি কথা বলার সাহস নেই ওর। আর সাথীর তো কোনো উপায়ই নেই, বাবাকে একা ফেলে সাথী হোস্টেলে থাকতে পারবে না। এখন কি করবে তা নিয়ে ওরা তিনজন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।

এমন সময় কাশফিয়া ওদের সামনে এসে হাজির হলো। ওদের তিনজনকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ও জিজ্ঞেস করলো ” কি হয়েছে? তোমরা তিনজন এভাবে মনমরা হয়ে কি ভাবছো?

সাথী উত্তর দিলো -” দেখলি না আজকেও দেরি করে আসার জন্য ম্যামের কাছে বকা খেতে হলো?”

-“হুমম.. তা তো দেখলাম। আচ্ছা বাসা যেহেতু দুরে আসতে দেরি হয়, তাহলে হোস্টেলে উঠে গেলেই তো ঝামেলা শেষ।”

সুজয় জবাব দিলো -” বাসা থেকে মানা করে দিয়েছে হোস্টেলে থাকা যাবে না।”

কাশফিয়া কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর বললো-” হোস্টেলে থাকতে মানা করেছে বুঝলাম, তাহলে এদিকে কাছে কোথাও একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকলেই তো পারো।”

বাদল জবাব দিলো-” ফ্যামেলির কেউ তো থাকতে পারবে না, একা একা ফ্যামেলি ছাড়া থাকলেও তো খাওয়া দাওয়ায় কষ্ট হবে।”

-” একটা কাজের লোক রেখে নিয়ো দরকার হলে।”

-” বুদ্ধিটা মন্দ নয়, কিন্তু আশেপাশে কি কোথাও কোনো বাড়ি খালি পাওয়া যাবে?”

-” এখান থেকে একটু এগিয়ে গেলেই একটা বাড়ি আছে। শুনেছি বাড়িওয়ালা একাই থাকেন, আর সব রুম ফাঁকা। তোমরা চাইলে ওনার সাথে কথা বলতে পারো।”

বাদল কাশফিয়ার কথায় রাজি হলো। সুজয় আর সাথীও এতে মোটামুটি রাজি হলো। ঐদিন ওরা তিনজন ক্লাস শেষে বাড়ি চলে গেলো। পরদিন সকালে বাড়িটি দেখতে যাওয়ার জন্য ঠিক করলো।

পরদিন সকালে বাদল, সুজয়,সাথী আর কাশফিয়া খালি বাড়িটি দেখতে গেলো। বাড়ি তো নয়, বিশাল এক রাজপ্রাসাদের মতো কুঠিবাড়ি! বাদল বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারে বাড়ির মালিকের সাথে কথা বললো।

বাড়ির মালিক ওদেরকে বললেন-” বাড়ি টা পুরোটাি ফাঁকা, আমি একাই থাকি। তোমরা যদি চাও বাড়িটি ভাড়া নিতে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

-” না না আঙ্কেল, আমাদের পুরো বাড়ির দরকার নেই। আমরা শুধু তিন বন্ধু থাকবো।”

বাড়ির মালিক হেসে জবাব দিলেন-” তিন বন্ধু বা তারও বেশি থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার এই বাড়িতে অনেকগুলো রুম রয়েছে সবগুলোই ফাঁকা। তবে টাকার ব্যাপারে চিন।চিন্তা করো না। তোমরা যত রুম নিয়েই থাকো না কেন আমি তিন হাজার টাকার থেকে এক টাকাও বেশি নিবো না।”

বাহ! এতো কম ভাড়ায় এতো সুবিধা! ওরা তিনজন মনে মনে খুশিই হলো। বাসা কনফার্ম করে যাওয়ার সময় বাড়ির মালিক ওদেরকে বললেন-” তোমরা চাইলে কালকেই এখানে উঠতে পারো।”

ওরা তিনজন হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে বের হয়ে এলো। সেখান থেকে বের হয়েই তিনজন সোজা ক্যাম্পাসে চলে গেলো। কাশফিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বললো
-“দেখলে তো, কি সুন্দর একটা বাড়ি তোমাদেরকে ঠিক করে দিলাম।”

সাথী বললো-” হুমম, এর জন্য তোকে এত্তোগুলো থ্যাংস।”

-” বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে যদ্দুর জানতে পারলাম-উনি একাই থাকেন এখানে। লোকটাকে বেশ ভালো মনে হলো।”

সুজয় জবাব দিলো -” হ্যাঁ দেখলে না কতো কম দামে বাড়িটা ভাড়া দিতে রাজি হলো?”

সাথী বাদলকে বললো -” উনি তো বললেন আমরা যতজন ইচ্ছে থাকতে পারি, তাহলে আমাদের সাথে বাবাও থাকতে পারবেন।”

-” কথাটা মন্দ বলিস নি। আঙ্কেল একা একা নাহলে কিভাবে থাকবেন! এক কাজ করি, আমরা কালকে এই বাড়িতে উঠি, তারপর বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে আঙ্কেলকেও নিয়ে আসবো।”

সাথী কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে বাদলের দিকে তাকালো। ওরা চারজন ক্যাম্পাসে বসে অনেক্ক্ষণ আড্ডা দিলো। নতুন বাড়িটা কিভাবে সাজাবে গোছাবে তা নিয়ে প্ল্যান করলো। তারপর চারজন যে যার বাড়িতে চলে গেলো। কালকেই ওরা নতুন বাড়িতে উঠবে। তাই নিজেদের জিনিসপত্র গোছগাছ করে নিলো।

চলবে………..

লেখাঃফাইজা বিনতে নূর।

svg1199