Close

ড্রাকুলার হাউজ (পর্ব -৩) – ফাইজা বিনতে নূর

 

******ড্রাকুলার হাউজ******

(পর্ব -৩)

সাথী চোখ মেলে দেখলো সকাল হয়ে গেছে। কাশফিয়া উঠে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছে। আজ কাশফিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য চা তৈরী করেছে। কাশফিয়া সাথীকে উঠিয়ে ওর হাতে এক কাপ চা দিয়ে বললো-” আজকে আমি চা বানালাম, খেয়ে বলো কেমন হয়েছে। যদিও আগে কখনো বানাই নি তবুও আজকে চেষ্টা করলাম।

সাথী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো -” ভালোই হয়েছে। প্রথমবার বানিয়েছিস তো, আস্তে আস্তে আরো ভালো হবে।”

কাশফিয়া খুশি হয়ে সুজয় আর বাদলের ঘরে গেলো।ওদেরকে জিজ্ঞেস করতেই সুজয় কিছু বলতে যাবে তখন বাদল বললো-” আজকের চা টা অপূর্ব হয়েছে।”

বাদলের সাথে সাথে সাথে সুজয়ও বললো-” আহা! এমন চা আমি জীবনেও খাই নি। সত্যি অপুর্ব।”

শুনে তো কাশফিয়া মহাখুশি। ও তাড়াতাড়ি নিজের জন্যও এক কাপ চা নিয়ে আসে। মুখে দিয়েই কাশফিয়ার চা খাওয়ার স্বাদ মিটে যায়। ও বলে উঠে-” ইয়াক! চায়ের মধ্যে সব দেখি লবন দেয়া।”

সুজয় ওর কথায় জবাব দিলো-” এই কথাই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাদলের জন্য বললাম না। আমি জীবনেও এমন লবন চা খাই নি।”

ওর কথা শুনে কাশফিয়া মন খারাপ করে ফেললো। সাথী এসে কাশফিয়াকে সান্তনা দিয়ে বললো-” চা বানাতে পারিস নি তো কি হয়েছে, চল তুই আর আমি মিলে আজকে সকালের নাস্তা বানাবো। কাজের লোক না পাওয়া গেলে তো আমাদেরই রান্না করতে হবে।”

ওরা দুজনে মিলে নাস্তা তৈরী করে। তারপর চারজন একসাথে সকালের নাস্তা করে। নাস্তা শেষে বাড়িওয়ালা ওদের রুমে এসে হাজির হন। ওদের সাথে কথাবার্তা বলেন। সাথী ওনার সাথে কথা বলে ওর বাবাকেও এই বাড়িতে আমার ব্যাবস্থা করে। কাশফিয়া হঠাৎ বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো -“আঙ্কেল আপনাদের এই বাড়িতে কি বিড়াল আছে নাকি?”

বাড়ির মালিক অবাক হয়ে বললেন -“কই নাতো! আমি কখনো দেখিনি। কেনো বলোতো?”

কাশফিয়া কিছু বলতে যাবে এমন সময় সাথী ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো-” আঙ্কেল কাশফিয়া বিড়াল খুব পছন্দ করে তো, তাই জিজ্ঞেস করেছে।”

বাড়ির মালিক ওদের সাথে কথা বলার পর উপরে চলে গেলেন। যাওয়ার পর কাশফিয়া সাথীকে জিজ্ঞেস করলো -” তুমি বাড়িওয়ালাকে মিথ্যা বললে কেনো?”

-” আমি চাই না তিনি কালকে রাতের ঘটনা টা জানুক। ছবিটা ভেঙ্গে গেছে শুনে তিনি মনে কষ্ট ও তো পেতে পারেন।”

সাথী রাতের কথাটা বাদল আর সুজয়ের কাছে বললো। ওরা ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। আর স্বাভাবিক নিয়মেই ওদের দিন কাটলো। আজ রাতে ওরা তিনজন আলাদা আলাদা কক্ষে ঘুমালো। আগের দিন সাথী আর কাশফিয়া একসাথে ঘুমিয়েছিলো কিন্তু আজকে সাথী একা। সাথীর বাবাও এসেছেন এই বাড়িতে কিন্তু তিনিও আলাদা কক্ষে ঘুমিয়েছেন। সাথী বিছনায় এপাশ-ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। আজকেও সাথী বেলকনিতে গিয়ে চাঁদের আলোয় চেয়ার পেতে বসলো। সাথী অন্যমনষ্ক হয়ে কিযেনো ভাবলো।

হঠাৎ সাথী লক্ষ্য করলো কারো পায়ের ঠকঠক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তার মানে কেউ হেঁটে যাচ্ছে। পায়ের আওয়াজটা ধীরে ধীরে কেমন যেনো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। অর্থাৎ যে লোকটি হাঁটছিলো সে এখন দুরে চলে যাচ্ছে। “কিন্তু কে যাচ্ছিলো! বাদল আর সুজয় তো সেই কখন চলে গেছে, নিজেদের রুমে এখন ঘুমাচ্ছে নিশ্চয়ই। তাহলে এখান দিয়ে কে গেলো!”- সাথী মনে মনে ভাবলো।

তারপরই সাথী ভাবলো ওর বাবা নিশ্চয়ই ঘুম আসছে না বলে পায়চারী করছেন। কিন্তু ও খেয়াল করলো পায়ের আওয়াজ তো একবারই শোনা গিয়েছিলো। যদি কেউ পায়চারী করতো তাহলে সে নিশ্চয়ই আবার হেঁটে ফিরে আসতো। ওর মনে কেমন জানি শঙ্কা লাগলো। এমন সময় বাইরে থেকে বিকট এক শব্দ শোনা গেলো। কোনো কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ।

সাথীর শঙ্কাটা এবার ভয়ে রুপান্তরিত হলো। শব্দটা শুনে ও রীতিমতো হকচকিয়ে গেল। কি ভাঙ্গলো এতো রাতে? নাহ্! আর বসে থেকে লাভ নেই।সাথী এবার উঠে দাঁড়ালো বাইরে কি হয়েছে তা দেখার জন্য। ও হাতে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে আগে চারপাশটা ভালো করে দেখলো। কই,কিছু তো নেই আশেপাশে! ও এবার বাড়ির বাইরের চারদিকটা হেঁটে দেখার মনোস্তাব করলো।

সাথী আগে বাদলের রুমের পাশে গেলো।ওর রুমের লাইট অফ করা, তার মানে ঘুমাচ্ছে। সুজয়ের জানালার আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে ও ঘুমোচ্ছে। তার মানে ওরা কেউ রুম থেকে বের হয় নি। সাথী এবার ওর বাবার রুমের দিকে গেলো।একি! বাবাও তো ঘুমোচ্ছে।

তাহলে কি সাথী ভুল শুনলো? কিন্তু তা তো হতে পারে না।ও স্পষ্ট পায়ের আওয়াজ শুনেছে। আবার কিছু পড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দও শুনেছে।একবার নাহয় ভুল হতে পারে কিন্তু দুইবার তো ভুল হতে পারে না। সাথী একপা একপা করে এগুচ্ছে। খুব সাবধানে চারদিকটা চুপে চুপে খুঁজছে। নিশ্চয়ই বাড়িতে চোর ঢুকেছে। কিন্তু এতো বড় বাড়িতে চোর ঢুকলেও খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তারপরেও ও চোর ধরার জন্য বাড়ির ভিতরের গলিতে ঢুকে পড়লো।

গলির ভেতর পুরটাই অন্ধকার। তবে আবছা একটু আলো দিয়ে ভিতেরের দিকে যাচ্ছে সাথী।চারদিকে একদম নিস্তব্ধ। দুপাশে সারি সারি রুম। তবে দরজাগুলে বাহির থেকে তালা দেয়া। “এতো বড় বাড়ি, এতগুলো রুম, সবই তো তালা দেয়া। তাহলে চোর গিয়ে লুকাবে কোথায়?”- সাথী মনে মনে ভাবলো। হঠাৎ সামনের দিকে এগুতেই কার যেনো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো।

সাথী পায়ের আওয়াজ অনুসরণ করে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু মনে হচ্ছে ওর অস্তিত্ব টের পেয়ে আওয়াজ ধারী দৌড়াতে শুরু করলো। সাথীও পেচন পেছন দৌড়ে লোকটাকে ধরার চেষ্টা করলো। ও লোকটিকে থামার জন্য বললো, কিন্তু লোকটি না থেমে দৌড়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বাগানের ভেতর ঢুকে পড়লো। সাথীও লোকটির পিছু নিয়ে বাগানে গেলো।কিন্তু ও এখন আর কোনো পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না।

এখন কি করে ও লোকটাকে অনুসরন করবে বুঝতে পারছে না।”সে কি তাহলে পালিয়ে চলে গেলো?কিজন্য ঢুকেছিলো এই বাড়িতে- আর কেই বা এই লোক! অন্ধকারে তো দেখাও যায় নি।”- সাথী মনে মনে বললো। এখন কি করবে ও? ঘরে চলে যাবে, না এখানে দাঁড়াবে কিছুক্ষণ।”কিন্তু এমন সময় কেউ এসে পেছন থেকে ওর মাথায় আঘাত করলো। সাথী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো………

হঠাৎ সাথী লক্ষ্য করলো ওর সাথে আসলে এতক্ষণ এসব কিছুই হয় নি।ও এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো, ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। আসলে বেলকনিতে বসে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানে না।সাথী এবার উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে হেঁটে নিজের রুমের দিকে গেলো। খাটের এক কোনায় বসে জগ থেকে পানি ঢেলে খেলো।পুরো শরীর থেকে ঘাম ঝরছে ওর,হাত পাও কাঁপছে। ও বিছানায় শুয়ে পড়লো।

শুয়ে শুয়ে সাথী চিন্তা করতে লাগলো, কেনো দেখলো এমন অদ্ভুত দুঃস্বপ্ন! এই স্বপ্ন কিসের ইঙ্গিত বহন করে? তবে কি কেউ ওর ক্ষতি করে চায়? নাকি কেউ এই বাড়ির ক্ষতি করতে চায়। কিন্তু কে সে,কেনই বা ক্ষতি করতে চায়?

সাথী নিজেই নিজেকে বলতে থাকে-“ধ্যাত! কেনো যে খামাখা এসব বাজে চিন্তা করছি।সামান্য একটা স্বপ্ন নিয়ে এতো কিছু ভাবা নিশ্চয়ই বোকামির কাজ।”

বলেই সাথী বিছানার ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হলো।কিন্তু এমন সময় কারো পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেলো। কিন্তু সাথী নিশ্চিত এবার সে স্বপ্ন দেখছে না।যা শোনা যাচ্ছে তার সবটাই বাস্তব। তবে এবার কি ওর স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন হবে! ভেবে সাথীর গলা শুকিয়ে গেলো।

চলবে…….

লেখাঃফাইজা বিনতে নূর।

svg1274